May 3, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

নিজে ফিরতে না পেরে হৃৎপিণ্ড কেটে দেশে পাঠালেন তিনি !

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :

ন্মভূমির প্রসঙ্গ উঠলেই চিত্ত চঞ্চল হয়ে উঠত তার। ঘরে ফেরার জন্য আকুল হয়ে থাকত হৃদয়। ২০ বছর বয়সে ঘরছাড়া সেই তরুণের আর জীবিত অবস্থায় ঘরে ফেরা হয়নি। তবে মৃত্যুর পর ঘরে ফিরেছেন তিনি।

নিজের বুক কাটিয়ে তা থেকে হৃদয় বের করিয়ে এনে তা মাতৃভূমিতে পাঠিয়েছেন। ১৭২ বছর ধরে সেই হৃদয় শান্তিতে ঘুমিয়ে রয়েছে মাতৃভূমি পোল্যান্ডে। জনপ্রিয় শিল্পীর মাতৃভূমির প্রতি সেই প্রেম চিরসবুজ কাহিনি হয়ে রয়ে গিয়েছে লোকের মুখে মুখে।

তিনি ফেড্ররিক ফ্রাঙ্কোস শপ্যাঁ। তিনি ছিলেন একজন সুরকার এবং পিয়ানোবাদক। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। শপ্যাঁর মৃত্যু হয়েছিল খুবই কম বয়সে।১৭২ বছর ধরে তার হৃদয় সংরক্ষিত রয়েছে পোল্যান্ডের একটি গির্জায়। ফ্রান্সে মৃত শপ্যাঁর হৃদয় পোল্যান্ডে নিয়ে আসার পিছনে রয়েছে এক মর্মান্তিক ইতিহাস। শপ্যাঁর মৃত্যুর পর তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতেই তার বোন লুকিয়ে তার হৃদয় পোল্যান্ডে নিয়ে এসেছিলেন।

জনপ্রিয় এই শিল্পীর জন্ম হয়েছিল ১৮১০ সালে পোল্যান্ডের ওয়ারস শহরে। ২০ বছর বয়সে তিনি ফ্রান্সে চলে যান। আমৃত্যু ফ্রান্সেই ছিলেন তিনি।

সুরকার এবং পিয়ানো বাজিয়ে ব্যাপক নামডাক কামিয়েছিলেন তিনি। তার কাছে পিয়ানো শিখতে ভিড় জমাতে শুরু করেন বহু মানুষ। এই উপার্জন দিয়েই তার ভরনপোষণ চলে যেত।

ব্যক্তিগত জীবনে শপ্যাঁ ছিলেন যথেষ্ট রঙিন মানুষ। জীবনে একাধিক প্রেম এসেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোনওটাই টেকেনি। প্রথমে মারিয়া উডজিনস্কা নামে এক শিল্পীর সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়। ১ বছরের মধ্যেই সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়।

তারপর এক ফরাসি লেখিকার সঙ্গে প্রেম হয় তার। সেটিও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। শারীরিকভাবেও পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন না শপ্যাঁ। ছোট থেকেই দুর্বল ছিলেন তিনি। নানা রকম অসুখ-বিসুখ নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল তার। তার যখন ২৮ বছর বয়স, তখন তার ওজন ছিল মাত্র ৪৫ কেজি!

জনপ্রিয় এই শিল্পীর শেষ জীবন কেটেছে খুবই অর্থকষ্টে। বন্ধুদের মাত্র কয়েক জনকেই তিনি পাশে পেয়েছিলেন। বন্ধুদের অর্থ সাহায্যে তার দিন কাটত।

১৮৪৯ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মৃত্যু হয় শপ্যাঁর। অপুষ্টিতে যক্ষ্মা হয়ে গিয়েছিল তার। এত বেশি কাশি হত যে কথা পর্যন্ত বলতে পারতেন না। কাশির সঙ্গে মুখ দিয়ে রক্তও উঠে আসত। শেষে পেরিকার্ডিটিস হয়ে মৃত্যু হয় তার।

তবে পেরিকার্ডিটিস হয়ে মৃত্যুর রিপোর্ট ২০১৭ সাল পর্যন্ত অজানাই ছিল। মৃত্যুর ১৬৫ বছর পর ২০১৪ সালে চিকিৎসক, গবেষকদের উপস্থিতিতে পোল্যান্ডের ওয়ারস-এর হলি ক্রস গির্জায় লুকিয়ে রাখা তার হৃৎপিণ্ড বের করে আনার পরই এই তথ্য সামনে আসে।

তবে হৃৎপিণ্ডতে কোনওভাবেই কাটাছেঁড়া করা হয়নি। সংরক্ষিত জারের বাইরে থেকে দেখে এই রিপোর্ট দিয়েছেন তারা, যা ২০১৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় আমেরিকান জার্নাল অব মেডিসিন-এ।
পোল্যান্ডের ওয়ারস-এর ওই গির্জায় কিন্তু শপ্যাঁর শুধু হৃৎপিণ্ডটিই রাখা রয়েছে। তার দেহের বাকি অংশ শায়িত রয়েছে ফ্রান্সে। আসলে মৃত্যুশয্যায় শপ্যাঁ চেয়েছিলেন তার জন্মভূমিতে ফিরতে। কিন্তু তখন তার শারীরিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই তাকে পোল্যান্ডে নিয়ে আসা হয়নি।

বদলে তার বোন পোল্যান্ডে গিয়ে তার কাছে থাকতে শুরু করেছিলেন। তখনই বোনকে তার শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন শপ্যাঁ। তিনি চেয়েছিলেন মৃত্যুর পর অন্তত যেন তার হৃদয় পোল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।

শপ্যাঁর মৃত্যুর পরই খুব সন্তর্পনে চিকিৎসকদের সাহায্য নিয়ে লুকিয়ে শরীর থেকে তার হৃদয় বের করে নেন তার বোন। তারপর সেটি একটি অ্যালকোহল ভরা বোতলের মধ্যে লুকিয়ে ফ্রান্স থেকে পোল্যান্ডে নিয়ে আসেন।

পোল্যান্ডের ওয়ারস-এর হলি ক্রস গির্জাতে এখনও একইভাবে ওই বোতলের তরলের মধ্যেই ভেসে রয়েছে তার হৃদয়। অ্যালকোহলের মধ্যে ভেসে থাকা ওই হৃদয়ের ওপর তার নামাঙ্কিত স্মৃতিসৌধও গড়ে উঠেছে।

গবেষকেরা আশঙ্কা করছিলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এভাবে পড়ে থাকার ফলে অ্যালকোহল শুকিয়ে শপ্যাঁর হৃদয় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ২০১৪ সালে স্মৃতিসৌধ ভেঙে সেটি বের করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা গিয়েছিল, সেটির কোনও ক্ষতি হয়নি।

Related Posts

Leave a Reply