May 4, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular ওপার বাংলা সফর

এশিয়ার সব থেকে বয়জ্যেষ্ঠ আম গাছটি বাংলাদেশের নাগরিক

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 
শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীতে এটাই সম্ভবত সব থেকে বড় আম গাছ। যা ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী এলাকায় অবস্থিত। বর্তমানে এ গাছটিকে ঘিরে প্রতিদিনই ভীর জমাচ্ছে নানা স্থানের পর্যটকরা।

সৃষ্টির অপার রহস্যের এক নিদর্শন হয়ে এই আম গাছটি কেবল ওই অঞ্চলের মানুষের মাঝেই বিস্ময়ক্ষুধা নিবারণ করছে না, আজব এই গাছকে কেন্দ্র করে এখন এই অঞ্চলকে পর্যটন অঞ্চল করার কথাও ভাবা হচ্ছে।

জানা গেছে, এই বৃহত্তম আম গাছটিকে ঘিরে শুধু ওই গ্রামই নয়, পুরো অঞ্চলই নাকি এখন বেশ পরিচিত। গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিশালাকার এই আম গাছের খবর এখন দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে পৌঁছে গেছে দেশ-বিদেশে। ফলশ্রুতিতে প্রতিদিনই আজব এ গাছের দর্শন পেতে হরিণমারী এসে হাজির হচ্ছেন অনুসন্ধিৎসু-ভ্রমণপিপাসুরা।

সূত্র বলছে, তিন বিঘা (এক একর) জমি জুড়ে বিস্তৃত এই আম গাছটি ঘিরে ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও এই বৃক্ষকে দর্শনে সড়ক অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় পর্যটন সুবিধা সৃষ্টির জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা ব্যক্তিবর্গরা। একইসঙ্গে স্থানীয়রা আশা করেন, এশিয়ার সর্ববৃহৎ আম গাছের খ্যাতি কুড়ানো এই বৃক্ষটি একসময় গিনেজ ওয়ার্ল্ডবুকেও স্থান করে নিবে।

দেশের উত্তরাঞ্চলীয় বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত, বতর্মান ঠাকুরগাঁও জেলায় অন্তর্ভূক্ত  বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় সীমান্তবর্তী আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী (নয়াপাড়া) গ্রামে দুই শতাব্দির নীরব সাক্ষী এই বৃক্ষের অবস্থান। ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে যার দুরত্ব ত্রিশ কিলোমিটারের বেশি নয়।

অতিকায় এই আমগাছটি স্থানীয়ভাবে ‘সূর্য্যপুরী আম’ গাছ নামে ডাকা হয়। গাছটির প্রায় ১৯ টি বৃহাদাকার শাখা বা ডাল রয়েছে, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৬০ থেকে ৮০ ফুট। শাখাগুলোর ব্যসার্ধ ৩০ থেকে ৩৫ ফুট। যুগ যুগ ধরে সম্প্রসারিত হতে থাকা গাছের প্রত্যেকটি ডালের উপর অনায়াসে হাটাচলা করা সম্ভব।

নয়নাভিরাম শোভা ছড়ানো আমগাছটির প্রত্যেকটি শাখা বা ডাল গাছের মূলকান্ড থেকে বের হয়ে ঢেউয়ের মতো আকৃতি ধারণ করে মাটি স্পর্শ করেছে। ডালগুলো মূলকান্ড থেকে বেরিয়ে একটু উপরে উঠেই আবার তা মাটিতে নেমে গেছে। তারপর আবারও উপরে উঠে গেছে।

গাছের বর্তমান মালিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাছটি তার জন্মের আনুমানিক দুশ’ বছর পার করে ফেলেছে। হরিণমারীর প্রয়াত শরিফ উদ্দীনরে দুই ছেলে মোঃ সাইদুর রহমান মোল্যা(৪০) ও মোঃ নুর ইসলাম মোল্যা (৩০) উত্তরাধিকারসূত্রে গাছটির মালিকানা পেয়েছেন।

গাছের অন্যতম মালিক নুর ইসলাম জানান, ‘প্রতিবছর এ গাছ থেকে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ মণ আম উৎপাদন হয়, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ১ লাখ টাকা।’

তিনি জানান, এই বৃহৎ আমগাছটির পাশেই আরো কয়েকটি একই জাতের আমগাছ রয়েছে, যা হুবুহু ওই আমগাছের মতোই ডালপালা বিস্তার করে মাটির সঙ্গে ঢেউ খেলিয়ে আলিঙ্গন করছে। তাদের আশা, অদূর ভবিষ্যতে এই গাছটিও বিশালাকার পাবে ও মানুষের বিস্ময় হয়ে থাকবে।

গাছটিকে ঘিরে প্রত্যন্ত এই জনপদ এখন রীতিমতো পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। একটিবার গাছটিকে দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, এমনকি দেশের বাইরে থেকেও  পর্যটকরা আসছেন প্রতিনিয়ত। যার ফলে গাঠের আশাপাশে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ যানবাহন রাখার সু-ব্যবস্থাও!

এমনি এক সৌন্দর্য পিপাসু বিচারপতি একেএম ফজলুর রহমান। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারক সম্প্রতি আমগাছটি দেখতে আসেন।

প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘স্রষ্টার এক বিষ্ময়কর সৃষ্টি এই আমগাছ। আমগাছটির মূলকান্ড থেকে বেরিয়ে গেছে অনেকগুলো ডাল, যেগুলো একটু উপরে উঠেই আবার মাটিতে নেমে গেছে-তারপর আবারো উঠে গেছে। সত্যি মহান আল্লাহর এ এক বিষ্ময়কর সৃষ্টি।’

‘না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। স্রষ্টা যেন শিল্পীর তুলিতে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে মনের মতন করে গাছটিকে একেঁছেন। গাছটিতে হাজার হাজার আম ধরে আছে’-যোগ করেন বিচারপতি একেএম ফজলুর রহমান।

তিনি মনে করেন, পৃথিবীতে যা কিছু আশ্চর্য হিসেবে পরিচিত, স্রস্টার সৃষ্টির বিচারে এ আম গাছটিও একটি আশ্চর্যই বটে।

আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এ স্থানটির প্রতি সরকারের বিশেষ দৃষ্টি পাবে এবং যোগাযোগের জন্য রাস্তাটির উন্নয়ন সাধন করে স্থানীয় প্রশাসন একে ঘিরে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারে।’

Related Posts

Leave a Reply