May 4, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

ফেসবুকে গালাগাল দেওয়ার আগে সাবধান!

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 
খিস্তির উৎস কোথায়? প্রশ্নের উত্তরে পিউরিটানরা বলবেন— পাড়ার রোয়াক। কিন্তু, সে সব দিন আর নেই পাঁচু, খেলা ঘুরেছে বহু দিন। প্রথামত ‘রোয়াক’ ব্যাপারটাই উত্তর কলকাতা, ভবানীপুর, কালীঘাট, চেতলা বাদ দিয়ে বাকি মহানগর থেকে উধাও। ফ্ল্যাটবাড়ির তো আর রোয়াক হয় না! তাই সেখানে ‘খিস্তি’-ও নেই। আর অন্য মতে যে খিস্তির গঙ্গোত্রী হিসেবে পাড়ার সেলুনকে চিহ্নিত করবেন, সে গুড়েও বালি বেশ কিছু দিন। ‘সেলুন’ বলে কোনও ঋণ আর রাখেনি সুত-মিত-বাঙালি সমাজ। এসেশিয়ালি মেল ডোমেইন নেত্যদা অথবা লাচ্চুদার সেলুন তার যাবতীয় মহিমা-টহিমা নিয়ে অস্তমিত হয়েছে কবেই। ইউনিসেক্স এসি পার্লারে চুল কাটা যায়, দাড়ি কামানো যায়, চাইলে পার্শ্ববর্তিনী ফেসিয়ালরতা নিমসুন্দরীকে ঝাড়িও করা যায়, কিন্তু দিল খুলে খিস্তি করা যায় না।

দুটো প্রধান আশ্রয় লোপাট হয়েছে বলে কি বাঙালি তার খিস্তিচর্চা থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে? নাকি অন্য কোথা, অন্য কোনওখানে সে খাপ খুলে শ-কার ব-কারের নায়াগ্রা প্রপাতে অবগাহন করে ফাটিয়ে দিচ্ছে চরাচর? প্রশ্ন জটিল। কিন্তু ওয়াকিবহাল পাবলিক জানেন এর উত্তর। বাঙালির খিস্তিচর্চার স্বাভাবিক এবং সাবলীল ক্ষেত্রটি এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিড়িয়া। না, টুইটার নয়। কারণ, সেখানে মাপা শব্দে চাপা খিস্তি করার আস্যটি এখনও বাঙালি রপ্ত করে উঠতে পারেনি। দিল খুলে মনের ঝাল মিটিয়ে খিস্তির খোলা খাতা এখন ফেসবুক। ফেসবুক-এর সার্ট অপশনে গিয়ে ‘খিস্তি’ সার্চ দিলেই দেখা যাবে কেবলমাত্র খিস্তিচর্চার উদ্দেশ্যে খোলা রয়েছে কম করে খান পঞ্চাশেক গ্রুপ। এর বাইরেও নিশ্চয়ই রয়েছে। অ্যাডভান্সড সার্চ-টার্চ করে দেখা যেতে পারে। এই সব গ্রুপে কী হয়, তা বিশদ বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রাণ খুলে নিরালম্ব খিস্তি চর্চাই এদের উদ্দেশ্য। ‘এসো খিস্তি করি’, ‘দাদা খিস্তি করবেন না’, ‘কিস্তিতে খিস্তি’ এই সব গ্রুপ দু’বাংলা মিলিয়ে কম জনপ্রিয় নয়।

পাকা ধানে মই, কারোর বাড়া ভাতে ছাই দেওয়ার মিনিমাম বন্দোবস্ত নেই। খিস্তি ফর খিস্তিজ সেক-ই এদের উদ্দেশ্য। এতে কি বাঙালির মন ভরে? কারণ বের করে, কোমরে গামছা জড়িয়ে অন্য লেকের বাপ-বাপান্ত না করলে তার পেটে গজগজরত রবিবারের পাঁঠা হজম হওয়ার কথা নয়। সেক্ষেত্রে নিরলস কাজ করে চলেছে বেশ কয়েকটি আপাতনিরীহ পেজ। এদের উদ্দেশ্য অবশ্যই খিস্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া নয়। কিন্তু এদের আশ্রয়েই ঘটি-বাঙাল, ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান, সিপিএম-তৃণমৃল ইত্যাদি অছিলায় দে দনাদ্দন খিস্তি অবিরাম বর্ষিত হচ্ছে। এপ্রান্ত যদি সাড়ে বারো হাত চালান, ও প্রান্ত থেকে তবে ধেয়ে আসবে বাইশ গজ। কেউ কারও চেয়ে কম নন। শেষমেশ অ্যাডমিনকে হাত লাগাতে হয়। নয়তো সমাজ-মাধ্যমে এমন ঘোটালা পাকবে, তাকে থামাতে রাষ্ট্রযন্ত্রের হস্তক্ষেপ অনিবার্য হয়ে পড়বে।

ফেসবুক-এ যাদি এই উদ্দেশ্য প্রণোদন আর স্বার্থগন্ধিতা কিটিরমিটির করে তাকে, তবে ইউটিউব হল ‘অমল গানের বই’। এই একটি জায়গায় বাঙালি তার খিস্তি-প্রতিভাকে নির্মল রাখতে পেরেছে বলেই মনে হয়। বিনাকারণে কাঁচা খিস্তি নয়, রীতিমতো মকশো করে, হিসেব কষে একে একে বাঙ্গপুঙ্গবরা একানে নামিয়েছেন পুরনো বাংলা ছবির খিস্তি-ডাবিং, এমনকী ফেলুদা, নন্টে-ফন্টে পর্যন্ত এই খিস্তি কার্নিভ্যালে হুলালা হুলালা। এই আনন্দযজ্ঞে কে নই, হেমন্ত, উত্তম, সুচিত্রা, ছায়াদেবী, কমল মিত্র, ছবি বিশ্বাস, কিশোর কুমার মায় রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত প্যরোডায়িত হয়ে ক্যান্টার। কমেন্ট বক্সে উপভোক্তার সংযোজন। কেউ উল্লাসে উদ্বাহু, কোনও কোনও কিঙ্কি মামণি আবের রাগু রাগু কিটকিট— ‘মহাপুরুষদের নিয়ে এই সব অশ্লীলতা! ছি ছি!!’ এর উত্তরে পুং পৃথিবী আবার খিস্তিতে খান খান। মার গুড়জল দিয়ে রুটি!

এহ বাহ্য! বাঙালির সোশ্যাল মিডিয়ায় খিস্তি করার সবথেকে প্রকৃষ্ট জায়গা কোনও সংবাদ মাধ্যমের ফেসবুক পেজ। কারণ নেই অকারণ নেই যে কোনও পোস্ট-এর পিছনে ফেউবাজি করে চলেছে খিস্তির কমেন্ট। সানি লিওনে খিস্তি, জাপানে ভৃমিকম্পেও খিস্তি। সবথেকে বেশি খিস্তি ওয়েদার ফোরকাস্ট-এ বৃষ্টি হবে বলার পরে যাদি বৃষ্টি না হয়, তা হলে মা-মাসি উদ্ধার। আর যাদি সরাসরি বলে দেওয়া হয়, বৃষ্টি হবে না, তা হলে সাংবাদিকের মৃত্যুকামনা-টামনা করে একাক্কার। এগোলে নির্বংশ, পিছোলে নির্বংশ। কেকেআর-এ খিস্তি, আইপিএল-এ খিস্তি, সানিয়া মির্জায় খিস্তি, তালিবানে খিস্তি।

এঁরাই প্রকৃত বাঙালি। রোয়াক বা সেলুনের নিরালম্ব খিস্তি-সাধনা নয়, পুরোপুরি ‘ডিরেন কা ছুছুন্দর’-মার্কা এই সব নোংরাছোঁচা খ্যাংড়াগুঁপো খেউড়পনা বাঙালি আবহমানে অনেক দেখেছে। কেবল সাম্প্রতিকে সোশ্যাল মিডিয়া তাকে সারফেসে লিখিত আকারে পেশ করছে, এই যা।

এতে কি সংবাদমাধ্যম ডরায়? ফুঃ। এই সব খিস্তিরত নুড়কতবর্গ জানেই না, পুলিশ, মেছুনি আর সাংবাদিকদের ঘাঁটাতে নেই। চট করে এঁয়ারা রাগেন না বটে। কিন্তু একবার রেগে গেলে, সেই খিস্তি-ভিসুভিয়াসের সামনে দাঁড়ানোর যোগ্যতা এঁদের মতো নভিশ, বালখিল্যদের নেই।

Related Posts

Leave a Reply