April 30, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

সোনার চেয়েও দামি এই ধাতু রয়েছে আপনার বাড়িতে

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 

কসময় এই ধাতু ছিল এত দামি যে, তা শোভা পেত রাজারাজড়ার মুকুটে। শুনতে যতই আজগুবি লাগুক, একসময় এই ধাতুর দাম ছিল সোনার চেয়েও বেশি।

এই ধাতু রয়েছে আপনার বাড়ির হাঁড়িকুড়ি বাসন-কোসনে। এই ধাতুর তৈরি ফয়েল আপনি ব্যবহার করেন খাবারদাবারকে টাটকা রাখতে। যতদূর জানা যায়, অ্যালুমিনিয়াম প্রথম আবিষ্কৃত হয় রোমান সম্রাট টাইবেরিয়াসের আমলে, যিনি ছিলেন আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগেকার মানুষ। রোমান ইতিহাসের একটি প্রামাণ্য টেক্সট থেকে জানা যায়, একবার এক ধাতু সংগ্রাহক এক অদ্ভুত ধাতুতে তৈরি একটি প্লেট উপহার দেন সম্রাটকে। ধাতুটি ছিল রুপার মতো দেখতে এবং ওজনে ছিল অত্যন্ত হালকা। ইতিহাসবিদদের ধারণা ওই প্লেটটি ছিল অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। টাইবেরিয়াস এই প্লেট দেখে খুশি হওয়ার বদলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই আবিষ্কারকের প্রাণনাশের আদেশ দেন। কারণ সম্রাটের ভয় ছিল, এই নতুন ধাতুটি তৎকালীন রোমের সোনা ও রুপার বাণিজ্যে ভাঙন ধরাতে পারে।

টাইবেরিয়াসের নির্দেশে ওই আবিষ্কারকের মৃত্যু বৃহত্তর মানবসমাজে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহারকে প্রায় ২ হাজার বছরের জন্য পিছিয়ে দেয়। উনিশ শতকের শুরুর দিকে ইউরোপে পুনরাবিষ্কৃত হয় অ্যালুমিনিয়াম। কিন্তু সেই সময় আবিষ্কৃত অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ ছিল এত অল্প, এবং বক্সাইট আকরিক থেকে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাষণের প্রক্রিয়া ছিল এত জটিল, সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়সাধ্য যে অ্যালুমিনিয়াম হয়ে ওঠে এক দুর্মূল্য ধাতু। ১৮৫৩ সালের একটি হিসেব থেকে জানা যায়, সেই সময় আমেরিকায় প্রতি বছর ৯৩ হাজার ৩০০ কিলোগ্রাম সোনা উৎপাদন হতো, কিন্তু অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাষণ হতো মাত্র ৯৩ কেজি। এই দুর্লভ অথচ ব্যবহারোপযোগী ধাতুটি স্বভাবতই দুর্মূল্য হয়ে ওঠে।

সঙ্গত কারণেই উনিশ শতকের ইউরোপে আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে ওঠে অ্যালুমিনিয়াম। ডেনমার্কের সম্রাট দশম ক্রিশ্চিয়ান অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি মুকুট পরিধান শুরু করেন। তৃতীয় নেপোলিয়ন তাঁর ডিনার টেবিলে অতিথিদের নজর কাড়ার জন্য অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি বাসনকোসন ব্যবহার শুরু করেন। এমনকী ১৮৮০-র দশকে আমেরিকায় যখন ওয়াশিংটন মনুমেন্ট তৈরি হয় তখন তার একেবারে শীর্ষে বসানো হয় অ্যালুমিনিয়ামের একটি ফলক।

১৮৮৬ সালে ইলেক্ট্রোলাইসিসের মাধ্যমে বক্সাইট থেকে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাষণের পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। এর ফলে অ্যালুমিনিয়াম তৈরির ব্যয় এক ধাক্কায় কমে যায় অনেকখানি। অ্যালুমিনিয়ামের উৎপাদনও বৃদ্ধি পায় অনেকখানি। এই সময় থেকেই অ্যালুমিনিয়ামের দাম কমতে শুরু করে। বিশ শতকের শেষ দিকে দেখা যায়, বাজার ছেয়ে গিয়েছে অ্যালুমিনিয়ামে তৈরি জিনিসপত্রে। বাসনকোসন থেকে শুরু করে খাবার মোড়ার ফয়েল পর্যন্ত সবকিছুই তৈরি হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে। এখন তো আমাদের ঘরে ঘরে অ্যালুমিনিয়াম। অ্যালুমিনিয়ামের এই প্রাচুর্য দেখে বিশ্বাস করা কঠিন যে, এককালে এই ধাতু ছিল সোনার চেয়েও মূল্যবান।

Related Posts

Leave a Reply