April 29, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শিল্প ও সাহিত্য

রসুনলাল (গল্প)

[kodex_post_like_buttons]

অমৃতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

স্থান- চ্ন্দ্রকোণা বি.এল.আর .ও অফিসের সামনের ঝাকরা মুচকুন্দ গাছতলা।
কাল- গ্রীষ্মের এক শনিবারের ভর দুপুর।
পাত্র- স্কুল ফেরৎ পি.টি টিচার আমি,ও ঝাঁঝা রোদে ঝিমধরা ঢ্যাঙা মত একটি লোক ঢুলছিলো। যার সাথে যেচে আমিই আলাপ শুরু করেছিলাম ওই একটু জল পাই কোথায় জানতে। লোকটাকে জমির দালাল ভেবে কি যেন একটা শুধিয়েও ছিলাম।
হঠাৎই সে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল-
-“চাঁদে জমি কিনবেন স্যার?” তখনো লোকটার চোখ পিটপিট করে চলেছে, নিশ্চয়ই ফাজলামিতে!
-“কো- কোথায় বললেন?” আমি তুতলে উঠি।
-“চাঁদে।” লোকটা শিবনেত্র হয়ে বসে থাকে।জোড়া হাঁটু নড়ে।
-“আপনি কি পাগল না বি…?”
কথা শেষকরারও ধৈর্য থাকে না আমার।ডান হাত দিয়ে, বাঁ হাত ঘুষোই!
-“কেন কেন পাগল কেন?” লোকটা সত্যি সত্যি অবাক হয়।যেন একটা বলদা প্রশ্ন করেছি আমি!
-“না,চন্দ্রকোণা থেকে চাঁদ অবধি বুঝি ট্রেন সার্ভিস, প্লেন লাইন চালু হয়ে গিয়েছে না?”
আমার গলায় বিদ্রূপ!
-“ধ্যুর মশাই, এখান থেকে চাঁদ পর্যন্ত রেল ট্রাক,প্লেন সার্ভিস চালু হলে তো কবেই রাবণ রাজা হিয়া টু হুয়া-স্বর্গ অবধি সিঁড়ি বানিয়েই ফেলতে পারতো।কী পারতো তো? আরে বাবা রকেট ছাড়া চাঁদে যাওয়া যায়? বিজ্ঞান পড়েন নি?মহাকাশ যানে যেতে আসতে  হবে।” অত গরম লোকটার মুখে কথার খৈ ফোটে।
-“হুম্ শ্রীহরি কোটা টু মুন টাউন বুঝি সার্ভিস চালু হয়ে গেছে?”
-“না,হয় নি তবে হয়ে যাবে। বছর বিশেক লাগবে।ভাল কথা, আপনার বয়স কত বলুন তো?” লোকটার ডান চোখ ছোট হয়ে আসে।
-“কেন? আমার বয়স দিয়ে আপনি কী করবেন?জমির দালালির সাথে ঘটকালিটাও করেন নাকি সাইডে?
-“ধুর্ মশাই বলুন না।”লোকটা প্রবল উত্তেজিত ও নাছোড়।
-“আঠাশ” আমার সত্যি সত্যি রক্ত ফুটতে থাকে। উঃ কী কুক্ষণেই যে যেচে কথা বলতে গিয়েছিলাম!
-“ওঃ!তাহলে তো আপনি বিলো ফিফটি এজেই চাঁদে যেতে পারবেন মশাই!”
-“মানেটা কী?”প্রায় চেঁচিয়ে উঠি আমি।
-“সেটাও বুঝলেন না?
নাঃ,আপনি কিন্তু সত্যি সত্যি অঙ্কে বড্ড কাঁচা! পিটি টিচার না?ধরুন এখন আপনার বয়স আঠাশ তো?ঠিক কুড়ি বছর পর চাঁদে যাওয়া শুরু হলে আপনি তো ফরটিএইট ফরটিনাইনেই চাঁদে চলে যাবার সুযোগ পাচ্ছেন!কী পাচ্ছেন না?” লোকটার সরল জিজ্ঞাসা।
শুনেছি পাগলদের নাকি চাঁদ সম্পর্কে এক জাতের মোহ থাকে।কিন্তু এমন প্রখর সূর্যের আলোয়ও সত্যি কি কেউ চন্দ্রাহতই হয়?
আমিও অবশ্য চন্দ্রাহত। মানে আমার নিজের নাম সোমদেব, আমার বউ এর নাম চন্দ্রিমা, মাস ছয় বিয়ে করেছি, ছোটো শালীর নাম সোমা! শ্বাশুড়ী ইন্দু আর শ্বশুর সোমেশ্বর! কাজেই ব্যাপারটা বোঝাই যাচ্ছে!
আমি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করি,
-“আপনার নামটা কী মশাই?”
লোকটা ফিক্ করে হেসে বলল-“রসুনলাল”।
-“রসুন? রসুন কোনো মানুষের নাম হয়?”
-“হবে না কেন ?লাউসেন হলে রসুনলাল হতে পারে না?”
-“না,তা না,আসলে আপনি যেমন ছিটকুল, মানে ইয়ে চন্দ্রাহত আর কি ! তাতে আপনার নাম…”
-“আমার নাম চন্দ্রগুপ্ত,কি চন্দ্রস্বামী,চন্দ্রকান্ত গোছের কিছু একটা হবে,কী তাইতো?”
-“না মানে ওই…”
লোকটা আমার তোতলামি দেখে হো হো করে হেসে উঠে হাঁটুতে চাপ্পড় কষিয়ে বলে বসল,-“রসুন শুনেই নাক শিটকোলেন তো? রসুনটাও কিন্তু চাঁদের সাথেই কানেকটেড্।”
-“মানে? রসুন কি চাঁদ থেকে চালান হয়েছে পৃথিবীতে?না কি চাঁদে চাষ চলছে রসুনের?”
-“তা আপনি যদি চাঁদে জমি কিনে রসুন বুনতেই পারেন।সে আপনার ইচ্ছে।চাঁদের জমিতে যে চাষ হবে সে তো বিজ্ঞানীরাই  বলছেন।কিন্তু ওই যে বললেন রসুন কি চাঁদ থেকে চালান হয়েছে কিনা,এটা একদম ঠিক বলেছেন!
বুঝলেন মশাই,ওই যে রাহু-আরে যার গুঁতোয় লোকে জেরবার হয়-সেই রাহু কেতুর, রাহু -সমুদ্র মন্থন করে যখন দেবতারা অসুরদের ভাগিয়ে নিজেরা মিলে অমৃত পানে বসেছে-ঠিক তখন সেই রাহু লুকিয়ে লুকিয়ে দেবতা সেজে অমৃতের ভাগ নিতে হা করে সে দলে ভিড়েছে দেখেই ওই চাঁদ গিয়ে তো বিষ্ণুকে রিপোর্ট করেছে-“স্যার স্ক্যাম হচ্ছে!”
বিষ্ণুও রেগে মেগে ঝপাং করে সুদর্শন চক্র ছেড়ে দিয়েছে রাহুর গলা কাটতে।ততক্ষণে রাহুর মুখেতো অমৃত ঢালা হয়ে গিয়েছে!অমৃত জিভ বেয়ে গলা দিয়ে পেটের দিকে নাববে নাববে করছে,ঠিক তখনই সুদর্শন চক্র এসে ঘ্যাচাং করে দিলে তার গলা থেকে ধর মুণ্ড আলাদা করে।
ব্যাস,মুখে ঢালা অমৃতের ফোঁটা কাটা গলনালী বেয়ে টুপুস্ করে এসে ঝরে পড়ল পৃথিবীর মাটিতে!সাথে গলা কাটা রক্তের ফোঁটাও এসে পড়ল পৃথিবীতে!ওই অমৃতের ফোঁটা থেকে হল রসুন,আর রক্তের ফোঁটা থেকে হল পেঁয়াজ! এদিকে চাঁদের জন্য গলা কাটা গেল বলে সেই রাগেই তো রাহু বাগে পেলেই চাঁদকে গিলে খায়,ধরটা আলাদা বলে পেটে রাখতে পারে না!প্রতিবারই চাঁদ বেরিয়ে আসে বুঝলেন?
এসবই আমাদের ইতিহাস পুরাণে লেখা আছে।কাজেই চাঁদে আর রসুনে যে সম্পর্ক আছে সেটা বুঝলেন তো?
-“পারলাম মানে? বিলক্ষণ পারলাম!তবে কিনা আমিতো আর রসুন বুনবো বলে জমি খুঁজছি না।ওই কাঁঠা দেড়েকে একটা মাথা গোঁজার ঠাই বানাবার জন্যই জমি খুঁজছি চন্দ্রকোণায়।”
চাঁদের বদলে চন্দ্রকোণা শুনে 
‘বুরবাক্ পাগল’ বলে রসুনলাল ভয়ংকর রাগে গজ্গজ্ করতে করতে ছিটকে উঠে গেল।
-“হুঃ,চন্দ্রকোণায় জমি কিনবে,মাথা গুজবে!
জমির রাঘব বোয়াল তো চেনো না, ও সব রাহুর চেয়েও খতরনাক্!
গিললে আর পেট থেকে বেরুবে না চাঁদ!
আমাদের ওং বিষ্ণুরও ক্ষমতা হয় নি তাদের ধর মাথা আলাদা করবে!”
   চোখের সামনে দিয়ে খর রোদে রসুনলাল মিলিয়ে গেল বটে, তার কথাগুলো ভাসতে থাকলো আমার চার পাশে।

Related Posts

Leave a Reply