May 2, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

৮ বছর পরও এখানে শেষ হয়নি আত্মার খোঁজ !

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস : 

০১১ সালে বিধ্বংসী সুনামি এবং ভূমিকম্প কাঁপিয়ে দিয়েছিল জাপানকে। প্রায় ১৮ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন সুনামির ফলে। সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, সেই সমস্ত মৃত মানুষদের অশরীরী আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে জাপানের রাস্তাঘাটে। মধ্যরাতের জাপানে তাদের নাকি দেখা মিলছে যখন তখন।

এমনকী মনে হচ্ছে, যাঁরা সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছিলেন তাঁরাও এখনও ভুলতে পারেননি সেই দুঃস্মৃতি। কারণ তাঁদের অশরীরী আত্মা এখনও নাকি ঘুরে বেড়াচ্ছে জাপানের রাস্তাঘাটে। জাপানের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটে যাওয়া নানা অলৌকিক ঘটনার কথা প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও।

আন্তর্জাতিক স্তরে সবথেকে বেশি প্রচার পেয়েছে জাপানের ট্যাক্সি চালকদের ভৌতিক অভিজ্ঞতার কথা। তাঁদের ট্যাক্সিতে নাকি ভৌতিক যাত্রীরা উঠছেন। গন্তব্যস্থল হিসেবে তাঁরা নাম করছেন সুনামিতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোনও অঞ্চলের। তারপর গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর পর ট্যাক্সি ড্রাইভাররা পিছন ফিরে দেখছেন, যাত্রী উধাও হয়ে গিয়েছেন।

সেন্ডাই-এর এক ট্যাক্সি চালক যেমন বলছেন, দিন কয়েক আগে অত্যন্ত দুঃখী চেহারার এক ভদ্রলোক তাঁর ট্যাক্সিতে ওঠেন। তিনি যেতে চান এমন একটি বাড়িতে, সুনামিতে যেটি ভূমিসাৎ হয়ে গিয়েছে। মনে একটু দ্বিধা জাগলেও বিনা বাক্যব্যয়ে ট্যাক্সি চালক গাড়ি নিয়ে যান নির্দিষ্ট গন্তব্যে। তারপর ভাড়ার জন্য পিছন ঘুরতেই দেখেন, পিছনের সিট ফাঁকা। অথচ ট্যাক্সি মাঝপথে কোথাও থামেনি। ট্যাক্সির দরজাও খোলা হয়নি।

টাইমস অফ লন্ডনের এশিয়া বিভাগের সম্পাদক রিচার্ড লয়েড পেরি এই বিষয়ে লিখেছেন একটি গবেষণাধর্মী নিবন্ধ। নাম দিয়েছেন ‘গোস্টস অফ সুনামি’। জাপানে সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিচিত্র ব্যাখ্যাতীত ঘটনার বিবরণ ও বিশ্লেষণ রয়েছে এই নিবন্ধে।

পেরি জানাচ্ছেন, অশরীরী আত্মারা শুধু যে ট্যাক্সিতে হানা দিচ্ছে তা-ই নয়, অনেক সময়ে তারা ভর করছে জীবন্ত মানুষদের শরীরেও। কুরিহারা নামের শহরে অবস্থিত একটি জেন মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রেভারেন্ড কানেদা পেরিকে জানিয়েছেন, জীবন্ত মানুষের দেহ থেকে ভূত তাড়ানোর  কাজে এখন তাঁকে রীতিমতো ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।

কিছুদিন আগে রুমিকো তাকাহাশি নামের এক তরুণী নার্সকে কানেদার কাছে নিয়ে এসেছিলেন রুমিকোর পরিবারের লোকজন। কানেদার বক্তব্য, ওই নার্সের শরীরে ভর করেছিল এক মধ্যবয়সি ভদ্রলোকের আত্মা যাঁর মৃত্যু হয় সুনামিতে। মৃত্যুর পর থেকে তাঁর আত্মা ক্রমাগত চেষ্টা করে চলেছে তার কিশোরী মেয়ে কাওরির কাছে পৌঁছতে।

ওই নার্সের মাধ্যমে সেই আত্মা নাকি কানেদাকে জানায়, সে কাওরির স্কুলে পৌঁছতে চায়। কারণ কাওরিকে দ্রুত স্কুল থেকে বের করতে না পারলে গোটা স্কুল তলিয়ে যাবে সুনামির তলায়। কানেদা তখন তাকে জানান, ‘সুনামি তো হয়ে গিয়েছে।’ বিস্মিত কণ্ঠস্বরে উত্তর আসে, ‘ওঃ! আচ্ছা, আমি কি এখন জীবিত না মৃত? কাওরি কোথায়? সে সুস্থ আছে তো?’

আয়ানে সুতো সুনামিতে হারিয়েছিলেন তাঁর বাবাকে। বাবার মৃত্যুর শোক কিছুতেই মন থেকে দূর করতে পারছিলেন না এই তরুণী। এমতাবস্থায় একদিন একটি পাবলিক বাথে তিনি যান স্নান করতে। তাঁর চটি জোড়া রাখা ছিল একটি লকারে। স্নানের শেষে যখন চটি জো়ড়া লকার থেকে বার করতে যান আয়ানে, আঁতকে ওঠেন বিস্ময়ে।

দেখেন, চটির উপর রাখা রয়েছে সেই সাদা ফুলের গুচ্ছ, যেটি তিনি বাবাকে কবরস্থ করার আগে  রেখে দিয়েছিলেন বাবার কফিনের উপর। আয়ানের ধারণা, তাঁর বাবার আত্মাই মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার লক্ষ্যে মেয়ের লকারে রেখে গিয়েছিলেন ওই ফুলের গোছাটি।

মনস্তাত্ত্বিকরা বলছেন, সমস্ত বিষয়টিই কাকতালীয় কিছু ঘটনা এবং মানসিক বৈকল্যের পরিণাম। এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং বিপুল প্রাণহানি যখন ঘটে, তখন মানুষের মনে একটা ব্যাপক প্রভাব পড়ে তার। বহুদিন পর্যন্ত মানুষ সেই আঘাত সামলে উঠতে পারে না। ফলে সেই সময় মাস হ্যালুসিনেশন বা গণ দৃষ্টি বিভ্রমের মতো ঘটনা ঘটা অত্যন্ত স্বাভাবিক।

জাপানের সাধারণ মানুষ অবশ্য এই সমস্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। তাঁদের অধিকাংশেরই ধারণা, মৃত মানুষের আত্মারা খুঁজে বেড়াচ্ছে তাদের হারানো ঘরবাড়ি আর প্রিয়জনকে। সেইসব আত্মা থেকে তেমন ক্ষতির আশঙ্কা অবশ্য দেখছেন না সাধারণ মানুষ।

কিন্তু ভয় একটা রয়ে গিয়েছেই। সেই সঙ্গে রয়েছে অপঘাতে চলে যাওয়া মানুষগুলোর প্রতি সহানুভূতি। সব মিলিয়ে রহস্য ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে মধ্যরাতের জাপানের রাস্তাঘাটে।

Related Posts

Leave a Reply