May 5, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

এই বেঁটে মানুষটির পেছনে থাকত মেয়েদের লম্বা লাইন

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :

খাটো বা বেঁটে হওয়া পুরুষদের জন্য বেশ বিব্রতকর ব্যাপার। কিন্তু অ্যালান মট্ট, যিনি কানাডার পুরুষদের চেয়ে গড়ে ৭ ইঞ্চি বেশি খাটো, নিজের উচ্চতাকেই তিনি বিশেষভাবে কাজে লাগিয়েছেন।

এবার তার গল্পটাই বলা যাক:

যখন আমি স্কুলের খেলার মাঠে খেলা করতে যেতাম, তখনি বড় বড় মেয়েরা চিৎকার করতে শুরু করত আর আমার পেছনে ছুটতে শুরু করত, যতক্ষণ না আমার পালানোর সব পথ বন্ধ হয়ে যেত। যখন তারা আমাকে ধরতে পারত, আমাকে জড়িয়ে ধরে গলায় চুমু দিত। এরপরে আমি খেলার সুযোগ পেতাম অথবা আরেকটা দলের কাছে একই ঘটনায় পড়তে হতো।

আমার বয়স ছিল ৫। আমাকে সবাই আদর করত। আমি ছিলাম ক্যানাডার আলবার্টা অঙ্গরাজ্যের এডমন্টনের মি-হা-নোহ স্কুলের সবচেয়ে ক্ষুদে শিশু। এমনকি ওই বয়সেও, আমি বুঝতে পারতাম যে, ছোট হওয়ার কারণেই মানুষজন আমার সঙ্গে আলাদাভাবে ব্যবহার করছে। যেটা তখন আমি বুঝতে পারিনি, তা হলো, পরের বছরেই এই আচরণ পাল্টে অগ্রহণযোগ্য একটা অবস্থায় রূপ নেয়।

আমি ছিলাম সবার আদরের একটি ছোট্ট শিশু, ক্লাসের সবচেয়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থী। আগে আমি বাইরে যেতে পছন্দ করতাম। কিন্তু খেলার স্থানে বাজে মন্তব্যের কারণে খেলার সময়ে আমি বরং লাইব্রেরিয়ানকে বই গোছাতে সাহায্য করতে শুরু করলাম। সত্যি কথাটি হলো, বংশগত কারণেই আমার আর লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। আমার মা মাত্র পাঁচ ফুট লম্বা আর আমার বাবা ছিলেন পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা।

সুতরাং আমাদের চিকিৎসক বলেন, ভাগ্য খুব ভালো হলোে আমি হয়ত সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা হতোে পারি, যা কানাডার পুরুষদের গড় উচ্চতা থেকে বেশ নিচে। এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, চিকিৎসক ভুল বলেননি। আমার ১৩-তম জন্মদিনের পর আমার উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেল। আমার সারা জীবনের উচ্চতা শেষ পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ালো পাঁচ ফিট এক ইঞ্চি। বামন হিসাবে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে সরকারি বা চিকিৎসা বিজ্ঞানে যে উচ্চতার কথা বলা হয়েছে, তার চেয়ে আমার উচ্চতা মাত্র চার ইঞ্চি বেশি।

একজন বেঁটে ব্যক্তি হিসাবে জন্ম নেয়ার কারণে যা ঘটে, পরের বছরগুলোতে আমি সে বিষয়গুলো লক্ষ্য করলাম:

আমি এই বিষয়ে অনেকটা চুপ করে থাকতে শুরু করলাম। আমি শুনতাম অনেক মানুষ আমাকে বলছে, ‘এই যে, এদিকে আসো। বেঁটে হওয়ার জন্য তমার সঙ্গে কেউ আলাদা আচরণ করবে না।’ (যেসব মানুষ এই কথা আমাকে বলেছে, তাদের সবার উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি।)

বেঁটে ব্যক্তিদের সমাজ এই শিক্ষা দেয় যে, তাদের দিকে যা ছুড়ে দেওয়া হবে, সেটাই তাদের গ্রহণ করা উচিত। যখন আমি একটা নতুন চাকরি পেলাম আর তারা আমাকে নির্দিষ্ট একটা বেতনের কথা বললো, আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বললো, ‘আমি যা আশা করছিলাম এটা তার চেয়ে কম। আচ্ছা, ঠিক আছে, আমার এটা গ্রহণ করা উচিত।’ হয়ত একটা লম্বা ব্যক্তির অন্যরকম অনুভূতি হতো, তিনি হয়ত বলতেন, ‘না, আমার আরো দশ হাজার বেশি দরকার।’

আপনার কি কখনো একটি রুমে ঢোকার পরে মনে হয়েছে যে, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনাকে যাচাই করে বাতিল করে দেওয়া হলো? বেঁটে মানুষরা এই অনুভূতি খুব ভালো করে জানে। এখানেই সেই কষ্টকর শব্দ ‘লিটল নেপোলিয়ন’ এসেছে, যার মাধ্যমে খাটো মানুষের সফল হওয়ার স্বপ্ন নাকচ করে দেয়া হয়। যদি ছয় ফিট উচ্চতার একজন পুরুষ নিজের জন্য দাঁড়ায়, সেটাকে বলা হয় আত্মবিশ্বাস। কিন্তু আমার উচ্চতার কাউকে লড়াই করতে দেখলে বলা হয় নিরাপত্তাহীনতায় এবং অভাবে রয়েছে।

একসময় বাজারজাতকরণের একটি চাকরি করতাম, সেখানে নানা মিটিংয়ে আমাকে কথা বলতে হতো। আমি যেসব পরামর্শ দিতাম, সেগুলো বাতিল করে দেওয়া হতো, কিন্তু কয়েক মিনিট পরে আরেকজনের একই ধরণের পরামর্শ মেনে নেওয়া হতো। মিটিংয়ের লোকজন বলত, ‘খুব ভালো একটা আইডিয়া হয়েছে।’ আমার নিজের বক্তব্য শোনানোর জন্য আমাকে লড়াই করতে হতো, কিন্তু এরপরে বিরক্তিকরভাবে চাপ দিতে শুরু করলাম। কারণ আমার পরামর্শ যত ভালোই হোক না কেন, সেটা গ্রহণ করা হবে না বলে যেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,যে আমার ভালো কিছু বলার ক্ষমতা নেই।

একটি বৈঠকে এটা পরিষ্কার হয়ে গেল। সেখানে চিন্তা করার একটা পর্ব ছিল, যেখানে একটা প্রকল্পের ব্যাপারে সবাই পরামর্শ দিচ্ছিল।

সেই পর্বে আমি বললাম, ‘এটা বিপরীত দিক থেকে শুরু করা যায় না?’ ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর সঙ্গে সঙ্গে আমাকে চুপ করতে বললেন।পুরো রুমটি নীরব হয়ে গেল এবং তিনি বুঝতে পারলেন কাজটা ঠিক হয়নি। আমি একজন সহকর্মীকে ধন্যবাদ দেবো, তিনি আমার পক্ষে অবস্থান নিলেন। ‘এই বৈঠকে চালিয়ে যাওয়া সত্যিই খুব কঠিন, যখন আপনি অ্যালানকে এভাবে চুপ করিয়ে দেবেন।’ তিনি বললেন। অন্য সবাই একমত হওয়ায় আমার কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গেল, কোন কারণ ছাড়াই তিনি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে আসছিলেন।

বাস্তবতা হলোো, একজন বেঁটে মানুষ হিসাবে দশজন নারীর মধ্যে আটজনই আপনাকে একজন সম্ভাব্য যৌন সঙ্গী হিসাবে প্রথম দেখায় নাকচ করে দেবে। বাকি দুইজনও হয়ত চলে যাওয়ার কারণ খোঁজার আগে, আপনাকে তুলে ধরার জন্য কয়েক মিনিটের সুযোগ দিতে পারে। যখন আমি আমার নারী বন্ধুদের বলি যে, নারীরা বেঁটে মানুষদের সঙ্গে ডেটিং করতে পছন্দ করে না, তারা সবসময়েই একই কথা বলে: ‘এটা সত্যি নয়।

একসময় যখন আমি নতুন একটি চাকরি শুরু করি, তখন কম্পানি সব কর্মীকে নিয়ে এডমন্টনে একটি কনসার্ট এরিনায় বৈঠকের আয়োজন করেছিল। তখন একটা রীতি ছিল যে, কম্পানিতে যোগ দেওয়া নতুন কর্মীদের জন্য একটি অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। ওই ভ্যেনুতে ব্রুনো মার্স (যে আমার চেয়ে ৩ ইঞ্চি লম্বা) গান গেয়েছিল, তাই তার একটি গান আমাদেরও গাইতে বলা হলো।স্টেজে সবাই গুঞ্জন শুরু করলো যে, আমরা এটা করবো না।

আমি ব্রুনো মার্সের কোন গান কখনো শুনি নি। সুতরাং আমি আমার ফোনে গুগল করে তার গানের কথা খুঁজে বের করলাম এবং মাইক্রোফোন কাছে টেনে নিলাম। আমি সুরটা জানতাম না, সুতরাং আমি চোরুসের ‘লকড আউট অফ হেভেন’ গানের সুরে গান গাইতে শুরু করলাম, সবার সামনে, যাদের সঙ্গে আমার নতুন কর্মজীবন শুরু হচ্ছে। যখন আমি সবার সামনে এই কাজটি করলাম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঙ্গে সঙ্গে আমার নাম জেনে গেলেন।

কিন্তু একটা পার্টিতে একজন ব্যক্তির সঙ্গে আমার দেখা হলোো, যে আমাকে বললো, আর একবার তুমি নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বললে তমাকে ঘুষি মারবো। সুতরাং আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমি কতটা চমৎকার আর দেখতে সুন্দর, তা নিয়ে কৌতুক করবো। আমি দেখতে পেলাম, মানুষ এটা পছন্দ করছে। তারা যখন আমার সঙ্গে হাসছে, সেটা খুবই ভালো আর ইতিবাচক। আমি সুদর্শন সেটা সমাজ মনে করে না, কিন্তু আমি নিজেকে সুন্দর বলে সবসময়েই দাবি করতে পারি।

ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করা প্রতিটা সেলফিতে আমি লিখেছি, ‘আরেকটি সুন্দর দিন’ অথবা ‘তুমি কি এতটা সুন্দর সহ্য করতে পারবে?’ আমি আর নিজেকে নিয়ে আত্ম-সমালোচনায় ভুগি না। যখন আমি অতীতের কিছু অর্জনের দিকে তাকাই, তখন ভাবি, একজন বেঁটে লোক না হয়ে সাধারণ একজন মানুষ হলোে এর কিছুই সম্ভব হতো না।

Related Posts

Leave a Reply