May 5, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular রোজনামচা

৫ কোটির মস্তিষ্কে ‘ঘা’ করেছে করোনা, পশ্চিমবঙ্গে ভয়ঙ্কর সমীক্ষা

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

রোনা ও লকডাউনে বিপর্যস্ত ভারত। যদিও গোটা দুনিয়ায় এর প্রভাব জনমানুষে গভীর। কিন্তু কিছু-কিছু দেশ আছে যেখানে এর প্রভাব শুধু শরীরে নয় মনে অনেক বেশি। পশ্চিমবঙ্গে করা এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে সেই আতঙ্কের ছবিই। কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেমে যাওয়ার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক কোটিরও বেশি মানুষের মধ্যে ‘পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার’ (পিটিএসডি) এর আশঙ্কা রয়েছে। করোনা সংক্রমণ ও লকডাউন এই দুয়ের প্রভাবে তাদের মানসিক স্থিতি টলে গেছে বলে একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টস’ (আইএসিপি)-এর ‘ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট টাস্ক ফোর্স’র সদস্য তথা মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্র ‘ইনস্টিটিউট অব সায়কায়াট্রি’র ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট প্রশান্তকুমার রায়ের উদ্যোগে একটি সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

জনমনে করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের প্রভাব জানতে সমাজের বিভিন্ন আর্থিক স্তর ও নানা পেশার সঙ্গে যুক্ত প্রায় এক হাজার মানুষের ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, শহরতলি থেকে শুরু করে গ্রামীণ এলাকার ১৮-৮০ বছর বয়সীদের সমীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে।

এ সমীক্ষার আওতায় দশম শ্রেণি পাশ করেননি এমন শিক্ষার্থী যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছেন স্নাতক, স্নাতকোত্তরও পাশ করেছেন এমন শিক্ষার্থীও। সরকারি চাকরিজীবী, চুক্তিভিত্তিক কর্মী, বেসরকারি কর্মী, বেকার, অবসরপ্রাপ্তদের থেকে যেমন সমীক্ষার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তেমনই ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ী, দিনমজুর, কৃষক, আপৎকালীন পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, কৃষক, স্বাস্থ্যকর্মী, গৃহবধূর কাছ থেকেও সমীক্ষার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরেই কোভিড ও লকডাউন কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ফেলেছে। যার মধ্যে ১০ দশমিক ৩ শতাংশের ওপরে এই প্রভাব গুরুতর।

পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যা (ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ২০২০ সালের মে মাসের তথ্য অনুযায়ী) ৯ কোটি ৯৬ লাখের মধ্যে আনুমানিক চার কোটি ৯১ লাখ বা প্রায় ৫০ শতাংশ নাগরিকের মানসিক স্থিতি টলিয়ে দিয়েছে সাম্প্রতিক এই করোনা পরিস্থিতি।

প্রশান্তকুমার রায় বলেন, ‘কোভিড ও লকডাউনের কারণে যাদের মানসিক স্থিতি বিপর্যস্ত হয়েছে, তাদের একটা বড় অংশই মানসিক ও সামাজিক সহায়তা পেলে তা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কিন্তু রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ১০ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ২ লক্ষ ৫৯ হাজার মানুষের মধ্যে পরবর্তী কালেও পিটিএসডি, অবসাদ, উদ্বেগসহ গুরুতর মানসিক অসুখ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।’

পারিবারিক আয়ের সঙ্গে যে মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তা একাধিক সমীক্ষায় প্রমাণিত।

সংশ্লিষ্ট সমীক্ষায়ও দেখা গেছে, যাদের পারিবারিক আয় মাসিক দশ হাজার টাকার নিচে, তুলনামূলকভাবে তারা অনেক বেশি বিধ্বস্ত। আবার ৪৫-৫৫ বছর বয়সীদের মধ্যেও বাড়তি মানসিক চাপ ধরা পড়েছে এই সমীক্ষায়। প্রশান্তকুমার রায় বলেন, ‘এই বয়সীদের দায়িত্ববোধ বেশি থাকার কারণেই মানসিক উদ্বেগও বেশি।’

তবে মনোবিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, এই মুহূর্তে সার্বিক জনমানসের যে চেহারা দেখা যাচ্ছে, তা সাময়িক। এক মনোবিজ্ঞানীর মতে, ‘সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশে এই মুহূর্তে কোভিড নিয়ে যে দুশ্চিন্তা দেখা যাচ্ছে, তা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারাও ক্রমশ এই দুশ্চিন্তার আবহ থেকে বের হতে পারবেন বলে আশা করা যায়।’

Related Posts

Leave a Reply