May 9, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular শিল্প ও সাহিত্য

‘দাদাদের’ খবরদারি-নজরদারির আমল 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

র্জ অরওয়েল বিখ্যাত হয়েছেন রাজনৈতিক উপন্যাসের জন্য। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের লৌহ শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর ‘নাইনটিন এইটিফোর’ বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো গ্রন্থ। অরওয়েলের আরেক প্রসিদ্ধ বইয়ের নাম ‘বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং ইউ’।

বাংলা করলে বইটির শিরোনাম দেওয়া যায়, ‘দাদা তোমাকে নজর রাখছেন’। এই ‘দাদা’ বা ‘বড় ভাই’ কে, সেটা ব্যাখ্যার দরকার হয় না। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে দাদাদের চেনা কষ্টকর নয়। জাতীয় রাজনীতিতেও দাদাগিরি অনুপস্থিত নয়। বহু দাদা আছেন, যারা জনগণকে, অফিসারদের নিত্য শাসাচ্ছেন। এখন চলছে দাদাদের যুগ। জবরদস্তিমূলকভাবে চেপে ধরার যুগ। নজরদারি আর খবরদারির আমল।

এইসব আগ্রাসন বা খবরদারির সঙ্গে সোসিওলজির ‘প্যানঅপটিকন’ তত্ত্বের তীব্র মিল রয়েছে। এই তত্ত্বে সর্বাঙ্গীণ নজরদারিকে কর্তৃপক্ষের তুঙ্গ ক্ষমতার অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উল্লেখ করা হয় রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের বা রাষ্ট্রের চরম স্বৈরাচারের দ্যোতক হিসেবে। এতে যে ব্যক্তির গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ও অধিকার ক্ষুণ হচ্ছে, সেটাও বিবেচনা করা হয় না। ব্যক্তিকে যে প্রবল সন্দেহের মধ্যে এবং আতঙ্কের আবর্তে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, সেটাও ভাবা হচ্ছে না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানিতে ইহুদিদের এমনই সন্দেহের তালিকায় রেখে নজরদারির সম্মুখীন করা হয়েছিল। ৯/১১-এর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম নামের কাউকে পেলেই প্রচণ্ড নজরদারির আওতায় আনা হতো। যেন রাষ্ট্রের নাগরিক হয়েও লোকটি কেবল মুসলিম হওয়ার কারণে শত্রুপক্ষ বা সন্দেহভাজন। ব্যক্তির গণতান্ত্রিক ও মৌলিক মানবাধিকারের এমন চরম লংঘন অতীতে কখনও হয়েছে কি-না, কে জানে! এখন ভারতের কোথাও কোথাও মুসলিমদের সন্দেহভাজন তালিকায় রাখা হয় বলে অভিযোগ শোনা যায়।

ভারত বা উন্নয়নশীল বহু দেশেই এই খবরদারির সংস্কৃতি চালু হয়েছে। তুমি আমার পক্ষেও নও-অতএব শত্রুপক্ষ এবং সন্দেহভাজন। এমন সরল ও উগ্র রাজনৈতিক বিবেচনায় সমাজ, প্রশাসন, শিক্ষাঙ্গন, মিডিয়াসহ সকল ক্ষেত্রেই বিভাজন হয়ে গেছে। নিজের পক্ষের বাইরের সবাইকে নজরদারি ও খবরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে। গোয়েন্দা লাগানো, ফোনে আঁড়িপাতা, গোপন ক্যামেরা লাগানো ইত্যাদি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি খবরদারি-নজরদারিকে সর্বাত্মক করেছে। ব্যক্তির অতি গোপনীয় ও ব্যক্তিগত বিষয় বলে আর কিছুই থাকছে না! ভেতরের দাদা বা পাণ্ডাদের মতো বাইরের দাদারাও নানা কৌশলে ব্যক্তি, নেতৃত্ব, সমাজ, প্রশাসন, দেশ ইত্যাদির উপর চরম নজরদারি করছে। সব গোপন খবর হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে গোপন তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলও করা হচ্ছে।

বলাই বাহুল্য, পুরো পরিস্থিতিটিই অস্বাস্থ্যকর ও কুরুচিপূর্ণ এবং একই সঙ্গে ব্যক্তিগণ গোপনীয়তা ও মৌলিক অধিকারের জন্য হানিকর। কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ, নজরদারি, খবরদারি আর ব্যক্তির স্বাধীনতার মধ্যে তাহলে কি কোনোই সীমা-পরিসীমা থাকবে না? ব্যক্তির যা খুশি তা-ই কি কর্তৃপক্ষ উন্মোচিত করতে পারবে? এই ব্যাপারে অবশ্যই একটি সীমারেখা টানা জরুরি।

বাইরের থেকে যারা নজরদারি বা খবরদারি করছেন, তাদের ব্যাপারেও তো একটি প্রতিবিধান রাখা দরকার। আমাদের কতটুকু বাইরে প্রকাশযোগ্য সেটাও ঠিক করতে হবে। বাইরের যে কেউ এসে আমাদের সব কিছু দেখে ফেলবে বা প্রচার করবে, সেটাও তো কাম্য নয়। পুরো ব্যাপারটিকে তো আর উদাম করে দেওয়া যায় না। সরকারের নানা আইনের আওতায় যখন ব্যক্তির স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়, তখন ক্ষমতার দাপটে বাইরের কেউও দেশের অনেক গোপন বিষয় নিয়ে টানাটানি করতে পারে। এইসব কুরুটিপূর্ণ এবং গর্হিত কাজ ভালো প্রতিফলের বদলে খারাপ উদাহরণই সৃষ্টি করণে। ভেতরে ও বাইরের নজরদারি যেন ব্যক্তি  সমাজের অধিকারকে নস্যাৎ না করে, সেটাই কাম্য হওয়া উচিত।

Related Posts

Leave a Reply