May 4, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular সফর

এই রহস্য আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবেই 

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
প্রতিদিনকার ক্লান্তি ভুলে কিছুটা সময় অন্যরকম এক জগত থেকে ঘুরে আসার জন্য থ্রিলার মাস্টার আছে আপনার পাশে। পৃথিবীর হাজারো রহস্য আমাদের প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকছে। চলুন এমনই কোন এক রহস্যের ডাকে সাড়া দেই আজ। আজ জানবো হারিয়ে যাওয়া ইনকা সভ্যতা সম্পর্কে।

আজ আমরা যে রহস্যের কথা বলব তার সৃষ্টি হয়েছিল আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে। ইনকা সভ্যতার নাম নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন আপনারা। পেরুর এই পৃথিবীর ইতিহাসে সমৃদ্ধ ও বিখ্যাত সভ্যতার মধ্যে অন্যতম। কিন্তু যে কারণে ইনকা সভ্যতার নাম সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে তা হোল – মাচুপিচু। পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ইনকাদের গড়ে তোলা শহর মাচুপিচু।
১৪৫০ সালে ইনকারা মাচুপিচু শহরটি নির্মাণ করে। এর ঠিক একশ বছর পরই স্প্যানিশদের আক্রমণে ইনকাদের নির্মিত সব শহরই ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু সেদিন স্প্যানিশরা ইনকাদের আর সকল শহরের সন্ধান পেলেও এই শহরটির সন্ধান পায় নি। যার কারণে মাচুপিচু শহরটি ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু মানুষজন না থাকার কারণে এক সময় শহরটি পরিত্যাক্ত হয়ে যায়। দীর্ঘ চারশ বছর পর ১৯১১ সালে হিরাম বিংহাম নামের এক মার্কিন নাগরিক এই শহরটি আবিষ্কার করেন।
আর তা দেখে পৃথিবীবাসী চমকে ওঠে। মেঘের অনেক ওপরে এই শহরের অবস্থান, নিচ থেকে যার অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না! এত আগে এত ওপরে কীভাবে এমন একটা শহর নিরমান সম্ভব হল তা এক বিরাট রহস্য হয়ে আছে আমাদের কাছে!
আশ্চর্যের ব্যাপার হল ইনকারা জানতো না লোহার ব্যাবহার, না জানত চাকা কি জিনিস! তাদের নিজস্ব কোনো লিপি পর্যন্ত ছিল না। ছিল শুধু কিপু বলে দড়ির মত একরকম জিনিস। এতে ফাঁস পড়িয়ে তারা বিভিন্ন বিষয়ের খবর দূত মারফত আদান প্রদান করতে পারত। এক একটা ফাঁসের এক এক রকম অর্থ থাকত যা শুধু ওরাই বুঝতে পারত। সংবাদ আদান প্রদানের এক অদ্ভুত কৌশল, অনেক জায়গায় আদিবাসীরা মেসেজ আদান প্রদান করে ঢাক বাজিয়ে, অর্থাৎ এক প্রকার সাংকেতিক ভাষার সাহায্য নিত। তারা ভিরাকোচা নামক এক দেবতার পূজা করত, আর সূর্য দেবতা ইনতির পুজা করত। এমন এক জাতির পক্ষে কি করে পাহাড় উপরে এমন সমৃদ্ধ ও উন্নত শহর তৈরি সম্ভব হল তা আমাদের জানা নেই।
মাচু পিচুর অদ্ভুত স্থাপত্যশৈলীর সবগুলোই পাথরের তৈরি মজবুত কাঠামোর ওপর দাঁড়ানো। এত ওপরে এমন মজবুত অবকাঠামো নিপুণভাবে নির্মাণ করা সহজ কোন কাজ ছিল না। পাহাড়ের এক পাশ চূড়া থেকে একেবারে খাড়াভাবে ৬০০ মিটার নিচে উরুবাম্বা নদীর পাদদেশে গিয়ে মিশেছে। অন্যদিকে হুয়ানা পিচু নামের আরেকটি পর্বত খাড়া উঠে গেছে আরও কয়েক হাজার ফুট উঁচুতে। সুতরাং দুই দিক দিয়েই শহরটি প্রাকৃতিকভাবেই বেশ নিরাপদ ছিল। এ কারণে শহরটিকে ইনকাদের প্রাচীন দুর্গনগরী নামেও ডাকা হয়। শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৪০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এত উঁচুতে কীভাবে তারা একটা আস্ত শহর তৈরি করে ফেলল সেটাই সবচেয়ে বড় রহস্য। তাও আবার অনেক অনেক বছর আগে যখন ছিল না আধুনিক যন্ত্রপাতি কিংবা প্রযুক্তির সাহায্য।
যেভাবে হারিয়ে গেলো ইনকা সভ্যতা
কালের অমোঘ নিয়মে যদিও ইনকারা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়, কিন্তু থেকে যায় তাদের কীর্তি। যুগে যুগে বিভিন্ন অভিযাত্রী আর স্বর্ণলোভীর দল দক্ষিন আমেরিকার বিভিন্ন জঙ্গল আর পার্বত্য অঞ্চল তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ইনকাদের হারিয়ে যাওয়া শহরের সন্ধান পায়নি। সোনার শহর ‘এল ডোরাডো’র জনশ্রুতি চালু হয়। ১৯১০. সালের দিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হির্যাদম বিংহ্যাম খোঁজ চালাচ্ছিলেন এই শহরের। পেরুর বিভিন্ন পার্বত্য অঞ্চলে চলছিল তার অভিযান। নিজের দেশ, স্ত্রী, সন্তানকে ছেড়ে চালানো সেই অভিযানে এক সময় তার নৈরাশ্য আসছিল। সেই হারিয়ে যাওয়া শহরের সন্ধান তখনো পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছে আতিথ্য গ্রহন কালে তিনি জানতে পারেন পাশের একটি পাহাড়ের মাথায় নাকি একটি ছোটো পরিত্যাক্ত পাথরের শহর রয়েছে। কিন্তু তা গভীর জঙ্গলে ঢাকা। কাঠ সংগ্রহকারীরা সেই স্থানের কথা বলেছিল, কিন্তু তেমনভাবে অভিযান সম্ভব হয়নি। ১৯১১ সালের ২৪ শে জুলাই স্থানীয় একটি কৃষক ছেলে কে নিয়ে তিনি হাজির হলেন পাহাড়ের ওপর সেই পরিত্যাক্ত শহরে। জঙ্গলে ঢাকা সেই জায়গায় বেশ কিছু পাথরের বাড়িও চোখে পড়ল কিন্তু হ্যিরাম তখন ও ভিলাকাবাম্বার মোহে আচ্ছন্ন তাই তিনি যে কিসের সন্ধান সেদিন মানব সমাজ কে দিলেন তার ধারণা হয়ত সেদিন সম্ভব ছিল না। তাই জঙ্গল পরিষ্কারের নির্দেশ দিয়ে তিনি চলে গেলেন ভিলাকাবাম্বার সন্ধানে। ১৯১২ সালে তিনি যখন আবার ফিরলেন তখন ঝোপ ঝাড়ের ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসা একটা আস্ত শহর ঝলমল করছিল। রোদ আর মেঘের সাথে যে কিনা যুগ যুগ ধরে খেলে এসেছে। ইনকাদের একদম নাম না জানা হারিয়ে যাওয়া শহর ‘মাচুপিচু’।
ইনকা সভ্যতা নিয়ে মতভেদ
ইনকা সভ্যতা এর পাথরের তৈরি মাচুপিচু শহরের প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে মত বিরোধ থাকলেও মনে করা হয় রাজার প্রমোদ নিবাস বা সূর্য দেব ইনতি কে উৎসর্গ করে নির্মিত হয়েছিল এটি। তবে অনেকেই মনে করেন শত্রু আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ও নির্মিত হয়ে থাকতে পারে এই শহর। তবে ঠিক কি কারনে এই শহর ছেড়ে সবাই চলে গেল তা কারো পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি। আজও পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সুন্দর শহরের মর্যাদা পেয়ে চলেছে স্বর্গের কাছাকাছি এই শহরটি। ইউনেস্কো এই অঞ্চলকে ওয়াল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদাও দিয়েছে। প্রতি বছর অগণিত পর্যটক হ্যিরাম বিংহ্যাম হাইওয়ে ধরে পৌঁছে যান মাচুপিচুকে দেখতে। আপনার যদি কখনো পেরুতে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ হয়, মাচুপিচু নগরীকে এক নজর দেখে আসার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না যেন!

Related Posts

Leave a Reply