May 5, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

দেহ এলেও ৪৫০ বছর ধরে ‘নিখোঁজ’ হৃৎপিণ্ডের খোঁজে 

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা :
সুলতানের হৃৎপিণ্ড বলে কথা! তাও আবার সাড়ে চার শ বছর আগে ‘নিখোঁজ’ হওয়া। সম্প্রতি দক্ষিণ-পশ্চিম হাঙ্গেরির ছোট শহর সিগেতভারে জড়ো হয়েছিলেন একদল আন্তর্জাতিক গবেষক। একটি হৃৎপিণ্ড খুঁজে বের করতে গোটা তল্লাট চষে ফেলছিলেন তাঁরা। প্রকল্পে উড়ছে বিস্তর দেশি-বিদেশি টাকা। বলা হচ্ছে, তুরস্কের নামজাদা সুলতান সুলেইমানের কথা। ১৫৬৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। জয়ের গন্ধ পাচ্ছে হাঙ্গেরির সিগেতভার শহর অবরোধ করে রাখা তুর্কি বাহিনী। এমন সময়ে নিজের তাঁবুতে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করলেন সুলতান সুলেইমান। কারণ, বার্ধক্যজনিত সমস্যা। সুলতানের মরদেহ একপর্যায়ে অটোমান তুর্কি সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে নিয়ে সমাহিত করা হয়। পরে তাঁর সমাধির স্থানেই গড়ে ওঠে সুলেইমানিয়ে মসজিদ। দেহ দেশে এল বটে, কিন্তু সেখানেই গল্পের শেষ নয়, বরং আরেক রোমাঞ্চকর পর্বের শুরু। রোমাঞ্চের কারণ, সুলতানের হৃৎপিণ্ডটি। অনেকেরই বিশ্বাস, হাঙ্গেরির মাটিতেই সমাহিত করা হয় সেটি। অস্ট্রিয়ান হ্যাবসবার্গ বাহিনী ১৬৯২ সালে সিগেতভার শহরটি তুর্কিদের কাছ থেকে আবার দখল করে নেয়। গুঁড়িয়ে দেয় অটোমানদের তৈরি করা প্রতিটি স্থাপনা। তখন থেকেই সুলেইমানের হাঙ্গেরির সমাধির বিষয়টি ইতিহাসবিদদের কাছে এক রহস্য হয়ে ছিল। অবশেষে সম্প্রতি তাঁরা সেই কুহেলির আবরণ ছিন্ন করতে পেরেছেন বলে মনে করছেন। তুরস্ক ও হাঙ্গেরির এক দল ভূগোলবিদ, ঐতিহাসিক আর প্রত্নতাত্ত্বিক এ নিয়ে কাজ করছিলেন বেশ কিছুদিন ধরে। সিগেতভার শহরের পূর্বে আঙুরকুঞ্জে ছাওয়া একটি পাহাড়চূড়াকেই অভীষ্ট স্থান মনে করছেন তাঁরা। গুঁড়িয়ে যাওয়া রাশি রাশি অটোমান যুগের টালির নিচে তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন চোখে পড়ার মতো কিছু স্থাপনা।
এই গবেষকদের মতে, এখানেই সুলেইমানের সমাধিসৌধ ছিল। সেখানে আরও ছিল একটি মসজিদ, কোনো দরবেশের আবাসস্থল, সামরিক ব্যারাক আর প্রাচীন নগর প্রাচীর। তবে হতাশ করে দেওয়া কথাটি হচ্ছে, সুলতানের হৃৎপিণ্ডের সন্ধান সেখানে মেলেনি। প্রত্যঙ্গটি আলাদা করে একটি সোনার বাক্সে ভরে হাঙ্গেরির মাটিতে সমাহিত করা হয় বলেই প্রচলিত বিশ্বাস। অনুসন্ধান অভিযান চালানো গবেষক দল ধ্বংস করা ভবনটির স্থানে গভীর করে খোঁড়া একটি গর্ত খুঁজে পেয়েছে। তাদের ধারণা, হ্যাবসবার্গ বাহিনী ভবনটি ধ্বংস করার পরই গুপ্তধন শিকারিরা ওই গর্ত খোঁড়ে ধনরত্নের আশায়।
সুলতানের হৃদ্যন্ত্র বুকে নিয়ে লুকিয়ে থাকা সোনার বাক্স হয়তো তাদের হাতেই পড়ে। ধ্বংসাবশেষের যে ভাঙাচোরা অংশ তারা ফেলে গেছে, তা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে এটা কোনো রাজরাজড়ারই সমাধিস্থল ছিল। সুলেইমানের সময় তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্য ছিল সামরিক, আর্থিক আর সাংস্কৃতিক প্রভাবের মধ্যগগনে। সমৃদ্ধ একটি আইন সংহিতা প্রণয়ন করা তাঁর অন্যতম কীর্তি। সাম্রাজ্যে পরবর্তী কয়েক শ বছর ধরে অনুসৃত হয়েছে এটি। সুলেইমানের মৃত্যুর সময় তাঁর সাম্রাজ্যের বিস্তার ছিল উত্তর আফ্রিকার অংশবিশেষ, বলকান অঞ্চল আর বর্তমানের হাঙ্গেরি জুড়ে। প্রশ্ন উঠতে পারে, এত দিন পর ইতিহাস খুঁড়ে এই হৃদয় খুঁজে হবেটা কী? আসলে এর অনেকটাই রাজনীতি আর অর্থনীতি ঘিরে। আঞ্চলিক প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টায় তুরস্ক ক্রমেই বেশি করে তার সোনালি অতীতের দিকে সবার নজর ফেরাতে চাইছে। অন্যদিকে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোও তুর্কি বিনিয়োগ আর পর্যটক টানার চেষ্টায় মন দিয়েছে বিখ্যাত অটোমান স্থান ও স্থাপনাগুলোর সংরক্ষণে। চলতি অভিবাসন-সংকটের সূত্রে মুসলিমবিরোধী হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠা হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান পর্যন্ত সম্প্রতি তুরস্ক বন্দনায় মেতেছেন। তুর্কি জাতি আর হাঙ্গেরীয়রা উভয়েই দুর্ধর্ষ হুন শাসক আতিলার বংশধর—অরবানের মুখে এ কথা শুনে খুশি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও।

Related Posts

Leave a Reply