May 4, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular শিল্প ও সাহিত্য

সততা দরিদ্রের ভূষণ

[kodex_post_like_buttons]
অরবিন্দ ব্যানার্জী  
আমার ছবি তুলে কি করবেন স্যার, আমি কি আর এমন করেছি! “
 আজ সকালের তাপপ্রবাহের দরুন ঘর্মাক্ত নাজেহাল অবস্থায় যখন এই ব্যক্তি আমাদের অফিসে এসে পৌঁছলেন, আমরা ভাবলাম নিজের কোনো অভিযোগ বা ফরিয়াদ নিয়ে হয়তো ভদ্রলোক আমাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। আমাদের সাইবার বিভাগের একজন সহকর্মী ওনাকে আমাদের অফিসে বসিয়ে প্রথা মাফিক খাতা-কলম নিয়ে ওনার বক্তব্যের সারমর্ম নোট করার জন্য প্রস্তুত, তখন ভদ্রলোক গলার আওয়াজ যথাসম্ভব নম্র করে হাতে আঁকড়ে রাখা ব্যাগটি দেখিয়ে বললেন,
” স্যার, আমার দিদি রথতলাতে এই ব্যাগটি কুড়িয়ে পেয়েছেন, ব্যাগের মধ্যে অনেক গুলো টাকা রয়েছে। আর একটা মোবাইল ফোন রয়েছে। ফোনটায় মনে হয় চার্জ নেই, অফ হয়ে রয়েছে। “
আমি সম্ভবত একটা লেটার ড্রাফট করছিলাম, সামনের ল্যাপটপ থেকে মুখ সরিয়ে উঁকি দিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে ভালো করে ওনাকে আপদমস্তক দেখে ওনার কথাগুলো আতস্থ করার চেষ্টা করছিলাম। আমার সহকর্মীও যারপরনাই হতবাক, প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ওনার হস্তান্তরিত ব্যাগ খুলতেই দেখলাম ব্যাগে বেশ কিছু টাকা আর একটা মোবাইল ফোন রয়েছে।
এরপরে উনি আরও বিশদে জানালেন যে ওনার নাম প্রদীপ হাইত। ভদ্রলোক মালবাহী গাড়িচালক, দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে কাজ করেন। বাড়ি বেলঘরিয়া অঞ্চলে, ওনার এক পরিচিত আত্মীয়া বেশকিছুদিন পূর্বে নিজের হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন আমাদের অফিস থেকে ফিরে পাবার দরুন উনি এই অনাহুত সমস্যা সমাধানে অন্য কোনো উপায়ান্তর না দেখে উনি আমাদের দ্বারস্থ হয়েছেন।  রোদে ধুলোয় পুড়ে যাওয়া চামড়ার গড়ন ওনার দৈনন্দিন ক্লান্তিহীন পরিশ্রমের সাক্ষ্মী। ভোরবেলা ওনার দিদি ওই ব্যাগ রথতলা অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া ইস্তক উনি হন্তদন্ত হয়ে খোঁজখবর করে আমাদের কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন।
তবে উপভোক্তাকে ব্যাগ সহ ফোন ফিরিয়ে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব ছিলো আমাদের কাঁধে। ফোনটির আসল উপভোক্তা ফোন হারানোর পরেই সিম ব্লক করে দিয়েছিলেন, যেটা করাই  বাঞ্ছনীয়। কিছু  কারিগরির সাহায্য নিয়ে আমরা বিকেলের দিকে ব্যাগ, তার মধ্যে থাকা জিনিসপত্র সহ ফোনটি যখন আসল মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিলাম উনি খুশিতে আল্হাদিত। যে সহৃদয় ব্যক্তি তার সব সামগ্রী ফিরিয়ে দিয়েছেন সেই প্রদীপ বাবুর প্রতি অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেন।
আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছে ছিলো, যে প্রদীপ বাবুর হাত থেকেই ফোনের আসল মালিকের কাছে ব্যাগ সহ ফোন হস্তান্তর করাবো, কিন্তু প্রদীপ বাবু ব্যস্ত মানুষ। উনি নিজের কাজ ফেলে আমাদের কাছে এসেছিলেন, তাই মোবাইল ফোনের তথ্য উদ্ধার কিঞ্চিৎ সময় সাপেক্ষ মনে হওয়াতে ওনাকে অপেক্ষা করিয়ে রেখে, রোজগারের ক্ষতিসাধন করা অনুচিত হবে মনে করলাম। উনি অফিস থেকে বেরোনোর পূর্বে ওনার একটা ছবি নিজেদের সংগ্রহে রাখবো ভেবে ওনাকে বলতেই উনি এই লেখার প্রারম্ভে ব্যবহৃত ওই কথা গুলো আমাদের বলেছিলেন।
প্রদীপ বাবু আপনি অনেক কিছু করেছেন, নিজেদের দায়িত্ববোধ সন্মন্ধে ভুলতে বসা আমাদের প্রজন্মকে নতুন করে দায়িত্বের পাঠ পড়ালেন। আপনার দৈনন্দিন রুজি রুটির মাথার ঘাম পায়ে ফেলা লড়াই, আপনার মূল্যবোধের মেরুদন্ডকে সোজা রাখতে সক্ষম। নিজের হারিয়ে যাওয়া জিনিসগুলো অপ্রত্যাশিত ভেবে ফিরে পেয়ে, ওই ব্যক্তিটির খুশির
প্রাণোচ্ছল অভিব্যক্তিই ছিলো আজ আমাদের সারাদিনের প্রাপ্তি। প্রদীপ বাবু, আপনি অনেক ভালো থাকুন।  আপনার শুভ বুদ্ধি ও পরোপকারিতা, ছোঁয়াচে রোগের মতন সমাজে সংক্রমিত হোক।

Related Posts

Leave a Reply