April 28, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular রোজনামচা

সাবধান! করোনার পর এই ‘নিখুঁত ব্যবস্থা’ দিয়ে ঢুকবে আরো মহামারি    

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস : 

রোনার তাণ্ডব নৃত্য কবে থামবে কেউ বলতে পারে না। লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এখনো কোন ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে বিজ্ঞানীরা দিচ্ছেন নতুন হতাশার খবর। বলছেন, আগামীতে করোনাভাইরাসের মতো মহামারি পৃথিবীতে আরো আসবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ যে ধরনের সভ্যতা গড়ে তুলেছে, তাতে বন্যপ্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে রোগ সংক্রমণ এবং এরপর তা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ার ‌‘নিখুঁত ব্যবস্থা’ করে রাখা আছে। প্রাকৃতিক জগতে মানুষের অনুপ্রবেশ সে প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করছে। কোথায় এবং কীভাবে নতুন রোগের বিস্তার ঘটে, তা নিয়ে গবেষণা করা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এমন কথাই বলছেন।

সারা বিশ্বের এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এমন একটি পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যাতে বন্যপ্রাণী থেকে এসব রোগ বিস্তারের প্রক্রিয়ায় কী কী সাদৃশ্য দেখা যায় তা চিহ্নিত করা সম্ভব। একে বলা হয় ‘প্যাটার্ন রিকগনিশন’। এ পদ্ধতির ফলে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব যে, কোন কোন বন্যপ্রাণী মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তবে এটি ভবিষ্যতের কোনো রোগবিস্তারের জন্য প্রস্তুত থাকার যে বৈশ্বিক প্রয়াস, তারই অংশ।

‘গত ২০ বছরে আমরা ছয়টি বড় বড় হুমকির সম্মুখীন হয়েছি– সার্স, মার্স, ইবোলা, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ও সোয়াইন ফ্লু’, বলছিলেন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাথিউ বেলিস।

অধ্যাপক বেলিস বলেন, ‘আমরা পাঁচটি বুলেট এড়াতে পেরেছি, কিন্তু ছয় নম্বরটার হাত থেকে বাঁচতে পারিনি।’

সবচেয়ে বড় ভয়ের কথা, অধ্যাপক ম্যাথিউ বেলিস বলছেন—’করোনাভাইরাসই যে আমাদের সম্মুখীন হওয়া শেষ মহামারি, তা মোটেও নয়। আমাদের বন্যপ্রাণী থেকে মানবদেহে আসা রোগগুলোর দিকে আরো গভীরভাবে নজর দিতে হবে।’

এ পরীক্ষারই অংশ হিসেবে অধ্যাপক ম্যাথিউ বেলিস ও তাঁর সহযোগীরা এমন একটি প্যাটার্ন রিকগনিশন পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যার সাহায্যে আমরা বন্যপ্রাণী থেকে আসা যত রোগের কথা জানি, তার সবগুলোর উপাত্ত অনুসন্ধান করে দেখা যাবে। এ পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে বিজ্ঞানীরা হাজার হাজার ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট বা পরজীবী ও ভাইরাস সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। অধ্যাপক বেলিসের পদ্ধতি দিয়ে এ অণুজীবগুলো যেসব প্রজাতির প্রাণীকে সংক্রমিত করতে পারে, তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা সূত্রগুলো চিহ্নিত করা যাবে। এ সূত্রগুলো দিয়ে এটাও বোঝা যাবে যে কোন কোন অণুজীব মানুষের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

সব রোগের ক্ষেত্রেই এমন না হলেও, কিছু বন্যপ্রাণী যারা মানুষের উৎপাতের ব্যাপারে সবচেয়ে সহিষ্ণু – যেমন, কয়েক প্রজাতির ইঁদুর– তারা অনেক সময় রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব ছড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে বলে জানান অধ্যাপক কেট জোনস।

মালয়েশিয়ায় ১৯৯৯ সালে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। এক ধরনের বাদুড়ের মাধ্যমে এ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। বনভূমির প্রান্তে থাকার একটি শূকরের খামারে এ সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। জঙ্গলের বাদুড় ফল খেত। তাদের আধা-খাওয়া ফল মাটিতে পড়লে, তা খেতো শূকর। ওই ফলে লেগে থাকত বাদুড়ের মুখের লালা, যা থেকে শূকরের দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। ওই সংক্রমিত শূকরের দেখাশোনা করতেন খামারের ২৫০ জনেরও বেশি কর্মী। ফলে তাঁদের দেহেও দেখা দিল ভাইরাসের সংক্রমণ। তাদের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি কর্মীর মৃত্যু হয়।

কভিড-১৯ রোগে মৃত্যুর হার সম্পর্কে এখনো গবেষণা চলছে। তবে অনুমান করা হয়, যত লোক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়, তার প্রায় ১ শতাংশ মারা যায়। অনদিকে নিপাহ ভাইরাসের ক্ষেত্রে মারা যায় সংক্রমিতদের ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ।

অধ্যাপক ফেভরে বলেন, ‘এ রকম ইন্টারফেস কোথাও তৈরি হচ্ছে কি না, আমাদের তার ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে এবং অস্বাভাবিক কোনো কিছু দেখলেই তার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, মানব বসতি আছে এমন জায়গায় প্রতি বছর তিন থেকে চারবার নতুন রোগের উদ্ভব হয়। শুধু এশিয়া বা আফ্রিকা নয়, ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এটা হচ্ছে।

অধ্যাপক ফেভরে মনে করেন, করোনাভাইরাসের মতো ঘটনা আগামীতে বারবার ঘটতে পারে। তিনি বলেন, কীভাবে মানুষের কর্মকাণ্ড প্রাকৃতিক জগতের ওপর প্রভাব ফেলছে, তা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার আছে।

Related Posts

Leave a Reply